ঢাকা: শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাখালী আমতলী মোড়ে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের অবস্থানের কারণে পুরো এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমতলী মোড়ে একটি জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
আজ একনেক বৈঠক শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, রাজধানীর সাত কলেজকে নিয়ে আলাদা একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরিকল্পনা চলছে এবং এ জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। তবে সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশেষ কোনো সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই।
এই বক্তব্যের পরপরই তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তাদের দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য সম্পূর্ণ দ্বিচারিতা ও আগের কথার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের বিষয়ে আশ্বাস দিলেও এখন এর বিপরীত কথা বলছেন। আমরা এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং আরও কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
সাত দফা থেকে এক দফা, তীব্র হচ্ছে আন্দোলন
গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে শিক্ষার্থীরা তাদের সাত দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। তবে আন্দোলনের একপর্যায়ে গতকাল শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষার্থীরা সাত দফা থেকে সরে এসে শুধু তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচিও ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা চালানো হবে।
মহাখালীতে শিক্ষার্থীদের অবরোধ, স্থবির যান চলাচল
শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় মহাখালী আমতলী মোড়ে গিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় তারা সেখানে অবস্থান নেন।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা মহাসড়ক থেকে সরে গিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন।
এই অবরোধের ফলে পুরো মহাখালী এলাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে যায়। অফিস ফেরত কর্মজীবী মানুষ ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
পুলিশের বক্তব্য
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. তারেক মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আমতলীতে অবস্থান করছি এবং পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
তিনি আরও বলেন, এখনো কোনো ধরনের সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তবে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচি
শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করেছেন যে, তারা তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তারা জানান, পরবর্তী সময়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বড় ধরনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আপাতত সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলছে, তবে প্রয়োজনে আমরা আমরণ অনশনে কঠোর অবস্থানে যাব।’
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
মহাখালী বাস টার্মিনালে অপেক্ষমাণ যাত্রী ফারুক হোসেন বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় আছি। রাস্তা বন্ধ থাকায় কোনো গাড়ি ছাড়ছে না। জরুরি কাজে গাজীপুর যেতে হবে, কিন্তু কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।’
একইভাবে অফিসফেরত বেসরকারি কর্মচারী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘আমরা সাধারণ মানুষ। ছাত্রদের দাবি থাকতে পারে, কিন্তু এইভাবে রাস্তা বন্ধ করলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকেই বেশি কষ্ট পেতে হয়।’
সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সমাধানে পৌঁছানো। নতুবা এই সংকট আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন যে, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা পিছু হটবেন না এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন।
- তিতুমীর কলেজ আন্দোলন
- মহাখালী মহাসড়ক অবরোধ
- তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় দাবি
- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ
- শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
- সরকারি তিতুমীর কলেজ আপডেট
- সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা
- ঢাকা ট্রাফিক আপডেট আজ
- তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন